আফগানিস্তানে ভূমিকম্প: ৮৫০ জন প্রাণ হারিয়েছে Afghanistan earthquake news

Avhijan
0

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প মৃত বেড়ে ৮৫০

আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলে ৬ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প শত শত জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে গৃহহীন করেছে। এই অনন্য আর্টিকেলটি এই দুর্যোগের করুণ গল্প, ভূমিকম্পের বিজ্ঞান এবং ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে আলোচনা করে। মানবতার আলোয় লেখা এই পোস্ট পাঠকদের সচেতন করতে এবং ত্রাণের জন্য এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করে।

কি হয়েছিল আফগানিস্তানে

৩১ আগস্ট ২০২৫, রাত ১১:৪৭ মিনিটে আফগানিস্তানের কুনারনানগারহার প্রদেশে এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৮৫০টির বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং প্রায় ৩০০০ জন আহত হয়েছে। পাহাড়ি গ্রামের কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে এবং উদ্ধারকারী দলগুলো দুর্গম পথে জীবন বাঁচানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তালেবান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চারটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। এই বিপর্যয় শুধু সংখ্যার গল্প নয়, এটি হাজার হাজার ভাঙা স্বপ্ন, হারানো আশা এবং অসহায়ত্বের চিত্র। প্রতিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের পেছনে রয়েছে একটি পরিবারের কান্না। এই মুহূর্তে আমাদের হৃদয় ও হাত একত্রিত করে আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর সময়।

ভূমিকম্পের বিজ্ঞান: প্রকৃতির গোপন শক্তি

কতটা ভয়ঙ্কর ছিল এই কম্পন?

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.০ এবং এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৮.৫ কিলোমিটার গভীরে। এই অগভীর গভীরতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়েছে। এরপর ৪.৮ থেকে ৫.৩ মাত্রার ১৫টি আফটারশক এলাকাটিকে আরও বিপর্যস্ত করেছে, যা উদ্ধার কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে।

ভূমিকম্পের তরঙ্গ কত ধরনের হয়

ভূমিকম্পের তরঙ্গ তিন প্রকার, প্রতিটি তাদের নিজস্ব ভূমিকা পালন করে। প্রথমত, প্রাইমারি তরঙ্গ বা P-Wave, যা দ্রুততম এবং প্রথম ধাক্কা হিসেবে মাটির মধ্য দিয়ে ছড়ায়। দ্বিতীয়ত, সেকেন্ডারি তরঙ্গ বা S-Wave, যা ধীর কিন্তু শক্তিশালী এবং পাশাপাশি বা উপর-নিচে কম্পন সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, সারফেস তরঙ্গ, যা ভূপৃষ্ঠে ঢেউয়ের মতো চলে এবং পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক। এই তরঙ্গগুলো একত্রে আফগানিস্তানের গ্রামগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

২০২৫-এর সবচেয়ে মর্মান্তিক বিপর্যয়

২০২৫ সালে এই ভূমিকম্পটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ৮৫০টির বেশি মৃত্যু এবং হাজার হাজার আহতের ঘটনা এটিকে একটি অবিস্মরণীয় ট্র্যাজেডি করেছে। ২০২৩ সালে হেরাত ভূমিকম্পে প্রায় ২৫০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল, কিন্তু এই ভূমিকম্পের দুর্গম অবস্থান এবং দুর্বল অবকাঠামো এটিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।

ভূমিকম্পের উৎস: Tectonic শক্তির সংঘর্ষ

এই ভূমিকম্প ভারতীয় এবং ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফল। হিন্দুকুশ পর্বতমালার ভূতাত্ত্বিক গঠন আফগানিস্তানকে ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে। কেন্দ্রস্থল ছিল জালালাবাদ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এবং এর কম্পন পাকিস্তানের পেশোয়ার থেকে ভারতের শ্রীনগর পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে। অগভীর গভীরতা এবং ভঙ্গুর অবকাঠামো এই দুর্যোগকে আরও বিধ্বংসী করেছে।

ভারতের Seismic ঝুঁকি: আমরা কতটা প্রস্তুত?

ভারতও টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে। দেশের প্রায় ৫৫% এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। ভারতের ভূমিকম্প অঞ্চলগুলো চারটি জোনে বিভক্ত। Zone 5 বা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে জম্মু-কাশ্মির, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাটের কচ্ছ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল। Zone 4 বা উচ্চ ঝুঁকিতে দিল্লি-এনসিআর, বিহার এবং উত্তর পশ্চিমবঙ্গ। Zone 3 বা মাঝারি ঝুঁকিতে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ। Zone 2 বা নিম্ন ঝুঁকিতে তামিলনাড়ু, কর্ণাটক এবং কেরালার বেশিরভাগ অংশ। এই অঞ্চলগুলোতে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নির্মাণ এবং জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

মানবতার ডাক ত্রাণের হাত বাড়াই

তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি ত্রাণের আবেদন জানিয়েছে। তাদের মুখপাত্র মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ বলেছেন, “আমাদের মানুষের খাদ্য, ওষুধ এবং আশ্রয় প্রয়োজন।” হেলিকপ্টারে আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু funding-এর অভাবে ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত। ভারত, তুরস্ক এবং চীন ত্রাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে ব্যাপক সহায়তা এখনো প্রয়োজন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আফগানিস্তানের দুর্দশায় ভারত তাদের পাশে আছে।” তবে আন্তর্জাতিক তহবিল ২০২২ সালের তুলনায় অনেক কমে গেছে, যা ত্রাণ কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)