পরিবেশ আমাদের জীবনের ভিত্তি। বায়ুমণ্ডল, ওজোন স্তর, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং টেকসই শক্তির উৎস সম্পর্কে জানা আমাদের দায়িত্ব। এই ব্লগে আমরা ক্লাস ১০-এর জন্য পরিবেশ বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সহজভাবে আলোচনা করব।
বায়ুমণ্ডল কী?
পৃথিবীর চারপাশে থাকা গ্যাসের মিশ্রণকে **বায়ুমণ্ডল** বলে। এটি জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বায়ুমণ্ডলের গঠন
- নাইট্রোজেন (N₂): ৭৮.০৮৪%
- অক্সিজেন (O₂): ২০.৯৪৬%
- আর্গন (Ar): ০.৯৩৪%
- কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂): ০.০৪২%
- জলীয় বাষ্প (H₂O): ০–৪%
- ট্রেস গ্যাস: অবশিষ্ট ০.০৪% এর মধ্যে মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন ইত্যাদি।
বায়ুমণ্ডলের স্তর
বায়ুমণ্ডলকে রাসায়নিক গঠন এবং উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়।
রাসায়নিক গঠন অনুসারে
- সমমণ্ডল (Homosphere): ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি পর্যন্ত। গ্যাসগুলো সমানভাবে ছড়িয়ে থাকে।
- বিষমমণ্ডল (Heterosphere): ৮০ কিমি থেকে বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমানা পর্যন্ত। গ্যাসের অনুপাত অসম।
উচ্চতা ও উষ্ণতার ভিত্তিতে
ট্রপোস্ফিয়ার
- বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর।
- প্রতি কিমি উচ্চতায় উষ্ণতা ৬.৫° সেলসিয়াস কমে।
- ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত এখানে ঘটে, তাই একে ক্ষুদ্রমণ্ডল বলে।
- সর্বনিম্ন উষ্ণতা: -৫৬° সেলসিয়াস।
- ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা ও জলচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
স্ট্রাটোস্ফিয়ার
- উচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা বাড়ে।
- ঝ� roeষ্টি বা বজ্রপাত হয় না, তাই শান্তমণ্ডল বলা হয়।
- ওজোন স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে।
মেসোস্ফিয়ার
- সর্বনিম্ন তাপমাত্রা: -৯০.২° সেলসিয়াস।
- উচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা কমে।
থার্মোস্ফিয়ার
- আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এখানে অবস্থিত।
- বেতার তরঙ্গ আয়নোমণ্ডলের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।
- মেরুজ্যোতি (অরোরা) এখানে দেখা যায়।
এক্সোস্ফিয়ার
- বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর।
- উষ্ণতা: ১৬০০° সেলসিয়াস।
- কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশ স্টেশন এখানে থাকে।
ওজোন স্তর: পৃথিবীর প্রতিরক্ষা
১৯১৩ সালে ফরাসি পদার্থবিদ **চার্লস ফ্যারি** এবং **হেনরি বুইসন** ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন। স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ওজোনের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি (UV) রশ্মি শোষণ করে।
ওজোন কীভাবে তৈরি হয়?
- O₂(g) + সূর্যালোক (UV, কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য) → O(g) + O(g)
- O(g) + O₂(g) → O₃(g)
প্রাকৃতিকভাবে ওজোন ধ্বংস
- O₃(g) + সূর্যালোক (UV, বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্য) → O₂(g) + O(g)
- O₃(g) + O(g) → O₂(g) + O₂(g)
CFC-এর ভূমিকা
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র থেকে নির্গত **CFC গ্যাস** ওজোন ধ্বংস করে। একটি ক্লোরিন পরমাণু লক্ষাধিক ওজোন অণু ধ্বংস করতে পারে:
- CFCl₃(g) + UV → Cl* + CFCl₂
- Cl* + O₃ → ClO + O₂
- ClO + O₃ → Cl* + O₂
NO ও NO₂-এর ভূমিকা
জেট বিমান থেকে নির্গত NO ও NO₂ ওজোন ধ্বংস করে:
- NO(g) + O₃ → NO₂(g) + O₂(g)
- NO₂(g) + O₃ → NO(g) + 2O₂(g)
ওজোন ধ্বংসের ক্ষতিকর প্রভাব
- ক্ষতিকর UV রশ্মির সংস্পর্শে বৃদ্ধি।
- ত্বকের ক্যান্সার, ছানি, রোদে পোড়া, দ্রুত বার্ধক্য।
- চোখের রোগ।
- উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস।
ওজোন ঘনত্ব পরিমাপ: ডবসন ইউনিট (DU)।
গ্রিনহাউস ইফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং
গ্রিনহাউস ইফেক্ট কী?
সূর্য থেকে আগত তাপ পৃথিবী থেকে বিকিরিত হয়। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো এই তাপ শোষণ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে দেয়, যার ফলে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়।
গ্রিনহাউস গ্যাসের অবদান
- CO₂: ৫০%
- CH₄: ১৯%
- CFC: ১৬%
- O₃: ৮%
- N₂O: ৫%
- জলীয় বাষ্প: ২%
গ্লোবাল ওয়ার্মিং কী?
গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা দীর্ঘমেয়াদে বৃদ্ধি পাওয়াকে **গ্লোবাল ওয়ার্মিং** বলে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর প্রভাব
- হিমবাহ গলা ও অদৃশ্য হওয়া।
- তুষার দ্রুত গলা।
- তীব্র খরা ও পানির ঘাটতি।
- দাবানল ও তাপপ্রবাহের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
জীবাশ্ম জ্বালানি
মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশেষ থেকে তৈরি অপুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি। উদাহরণ: কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস।
তাপন মূল্য কী?
জ্বালানির একক ভর পোড়ালে উৎপন্ন তাপশক্তির পরিমাণ। একক: কিলোজুল/কিলোগ্রাম।
জ্বালানি ও তাদের তাপন মূল্য
| জ্বালানির প্রকার | জ্বালানির নাম | তাপন মূল্য (kJ/kg) |
|---|---|---|
| কঠিন জ্বালানি | ঘুঁটে | ৬,০০০–৮,০০০ |
| কাঠ | ১৭,০০০ | |
| কয়লা | ১৫,০০০–৩৪,০০০ | |
| তরল জ্বালানি | ডিজেল | ৪৪,৮০০ |
| কেরোসিন | ৪৫,০০০ | |
| পেট্রোল | ৪৮,০০০ | |
| গ্যাসীয় জ্বালানি | LPG | ৫০,০০০ |
| CNG | ৩৩,০০০–৫০,০০০ | |
| H₂ | ১৫০,০০০ | |
| বায়োগ্যাস | ৩৫,০০০–৪০,০০০ |
অ্যালবেডো কী?
সূর্যের ৩৪% শক্তি মেঘ (২৫%), ধূলিকণা (৭%), এবং ভূপৃষ্ঠ (২%) দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। এই প্রক্রিয়াকে **অ্যালবেডো** বলে।
জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
- লক্ষ লক্ষ বছর লাগে তৈরি হতে।
- বর্তমান ব্যবহারের হারে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
- বিদ্যুৎ, পরিবহন, শিল্পে ব্যবহৃত।
- পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
জৈব জ্বালানি কী?
উদ্ভিদ বা প্রাণীর কার্বন যৌগ থেকে তৈরি পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি। উদাহরণ: বায়োইথানল, বায়োডিজেল (জ্যাট্রোফা গাছ থেকে)।
মিথেনকে মার্শ গ্যাস কেন বলে?
**মিথেন (CH₄)** হলো হালকা হাইড্রোকার্বন, যা জলাভূমিতে জৈব পদার্থের পচনের ফলে উৎপন্ন হয়। তাই একে **মার্শ গ্যাস** বলা হয়।
মিথেন হাইড্রেট (ফায়ার আইস)
৪টি মিথেন ও ২৩টি জলের অণু (4CH₄·23H₂O) দিয়ে গঠিত। বরফের মতো দেখতে, আগুনে জ্বলে। কয়লা খনিতে দুর্ঘটনা রোধে মিথেন আগে সরানো হয়।
স্থিতিশীল উন্নয়ন
বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে, কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। লক্ষ্য:
- সামাজিক অগ্রগতি ও সমতা।
- পরিবেশ সুরক্ষা।
- প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ।
স্থিতিশীল উন্নয়ন
Ans:- স্থিতিশীল উন্নয়ন এমন উন্নয়ন প্রক্রিয়া যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না।
- এটি পরিবেশ, অর্থনীতি, এবং সমাজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।
- স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্য হল: সামাজিক অগ্রগতি এবং সমতা, পরিবেশ সুরক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ.
অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত বা পুনর্নবীকরণযোগ্য বা বিকল্প শক্তি যে সমস্ত শক্তির ব্যবহার সাম্প্রতিকালে শুরু হয়েছে যা দীর্ঘদিন ব্যবহার করলেও ফুরিয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
যেমন:- সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জোয়ার ভাটা শক্তি, ভূতাপ শক্তি প্রভৃতি।
প্রচলিতবা চিরাচরিত বা অনবীনকরনযোগ্য যে শক্তিগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে পুনরায় ফিরে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না তাদেরকে । যেমন:- কয়লা, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস, জীবাশ্ম জ্বালানি প্রভৃতি।
সুইট গ্যাস:-
Ans:- যেসব প্রাকৃতিক গ্যাসে হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) থাকেনা বরং কিছুটা পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে, তাই মিথেনকে সুইট গ্যাস বা মিষ্টি গ্যাস বলা হয়।
ফায়ার আইজ বা মিথেন হাইড্রেট :-
মিথেন হাইড্রেট হলো একটি দাহ্য গ্যাস যা 4 অনু মিথেন এবং 23 অনু জল (4CH4 -23H2O ) দ্বারা গঠিত, দেখতে বরফের ন্যায়, আগুনে সংস্পর্শে এলেই জ্বলে যায় ।
কয়লা খনি থেকে কয়লা তোলার আগে মিথেনকে তোলা হয় কেন?
Ans:- কয়লা খনিতে কোল বেডের মধ্যে মিথেন গ্যাস গুলো থাকে তাই কয়লা তোলার পর সেই মিথেন গ্যাস গুলি কয়লা খনির মধ্যে উন্মুক্ত অবস্থায় বিরাজ করে, যা বাতাসের সংস্পর্শে এসে আগুন ধরে যেতে পারে, তাই কয়লা খনি থেকে কয়লা তোলার আগে মিথেন গ্যাস তোলা হয়, যাতে সেখানে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে ।***এটির আরেকটি নাম ফায়ার ড্যাম্প (Fair damp)
আরো দেখুন : ভৌত বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় গ্যাসের আচরণ(physical science chapter 2 behaviour of the gas)
আরো জানো ***
- 80% পেট্রোল এবং 20% ইথাইল অ্যালকোহলের মিশ্রণ কে পাওয়ার অ্যালকোহল বলে |
- LPG মূল উপাদান বিউটেন যার পুরো নাম liquified petroleum gas.
- CNG মূল উপাদান মিথেন যার পুরো নাম Compact Natural Gas.
- জ্যাট্রোফা গাছেরথেকে বায়োডিজেল তৈরি করা হয় ।
- ODS এর পুরো নাম Ozone Depleting Substances.
- ODP এর পুরো নাম Ozone Depleting Potential.
- বায়োগ্যাস প্লান্টে মিথেন গ্যাস উৎপাদন করতে পারে মিথানোজেনিক ব্যাক্টেরিয়া (মিথানোকক্কাস)
- কার্বন বিহীন জ্বালানির নাম হাইড্রোজেন এবং পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম।
- CBM এর পুরো নাম Coalbed Methane.
- গ্যাসোলিনের সঙ্গে ২৩% ইথানল মিশিয়ে গ্যাসোহোল তৈরি করা হয়।
- সৌরকোষে ব্যবহৃত অর্ধপরিবাহী টির নাম সিলিকন ।

