জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার (WBJEE) ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণে রাজ্যের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। মেধাতালিকার শীর্ষ দশজনের সকলেই এবার রাজ্যের বাইরে নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন—বাংলা কি তার মেধা হারাচ্ছে? এই প্রতিবেদনে আমরা এই বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স ফল প্রকাশে দেরি
প্রতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরে নির্দিষ্ট সময়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর এপ্রিল মাসে পরীক্ষা হলেও ফল প্রকাশে চার মাসের বেশি সময় লেগেছে। গত ২৩ আগস্ট ফল ঘোষণার পর দেখা গেছে, মেধাতালিকার শীর্ষস্থানীয়রা ইতিমধ্যে অন্য রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে গেছেন। ২০২৪ সালে ফল প্রকাশিত হয়েছিল ৬ জুন, আর ২০২৩ সালে ১৭ জুন। এবারের বিলম্ব ছাত্রদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।
কেন এই দেরি?
ফল প্রকাশে দেরির মূল কারণ ছিল ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে আইনি জটিলতা। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পুরনো নিয়মে ৭ শতাংশ সংরক্ষণ বজায় রাখতে হবে বলে রায় দেওয়া হয়, যদিও রাজ্য সরকার ১৭ শতাংশ সংরক্ষণের পক্ষে ছিল। এই বিষয়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না, ফলে ফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটে।
মেধাবীদের ভিন রাজ্যে যাওয়ার কারণ
JEE মেইন ও JEE অ্যাডভান্সের ফল অনেক আগেই প্রকাশিত হওয়ায় বাংলার মেধাবী ছাত্ররা অপেক্ষা না করে ভিন রাজ্যের নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। মেধাতালিকার প্রথম সারির ছাত্রদের মধ্যে:
- অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী (প্রথম) ভর্তি হয়েছেন খড়্গপুর আইআইটি-তে।
- সাম্যজ্যোতি বিশ্বাস (দ্বিতীয়) ও অরিত্র রায় (চতুর্থ) ভর্তি হয়েছেন IIT বম্বেতে।
- দিসান্ত বসু (তৃতীয়) ভর্তি হয়েছেন বেঙ্গালুরুর আইআইএসসি-তে।
- প্রতীধ ধানুকা (নবম) ভর্তি হয়েছেন আইআইটি কানপুরে।
এছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম ও দশম স্থানাধিকারীরাও খড়্গপুর আইআইটি-তে ভর্তি হয়েছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, ফল দেরিতে প্রকাশের কারণে তারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি।
কৃতীদের মন্তব্য
মেধাতালিকার শীর্ষে থাকা অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী বলেন, “JEE advance ফল বেরিয়ে যাওয়ায় আমরা ভর্তি হয়ে গেছি। আমি ডেভলপমেন্ট ও কোডিং নিয়ে এগোতে চাই।” দশম স্থানাধিকারী অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফল দেরিতে বেরোনোর কারণে অনেকের অ্যাকাডেমিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” সাম্যজ্যোতির বাবা জানান, তাঁর ছেলের প্রথম পছন্দ ছিল আইআইটি বম্বে, যা পূরণ হয়েছে, তবে সময়মতো ফল বেরোলে আরও ভালো হত।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ফল প্রকাশে দেরি হলে বিকাশ ভবনে ধর্না দেবেন। তাঁর মতে, বাংলার মেধাবীদের বাইরে যাওয়া রাজ্যের জন্য ক্ষতি। অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু দাবি করেন, বাংলায় ভিন রাজ্য থেকেও ছাত্ররা পড়তে আসছে। তিনি বলেন, “বাইরে থেকে অনেকে আমাদের রাজ্যে পড়তে আসছে। এটা নতুন নয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নন্দিনী মুখোপাধ্যায় বলেন, “ফল প্রকাশে দেরি না হলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। অনেকে বেসরকারি কলেজে বা আইআইটি-তে ভর্তির জন্য বড় অঙ্কের টাকা খরচ করেছেন। এখন তাঁদের ফিরিয়ে আনা পরিবারের পক্ষে কঠিন। সরকারের গড়িমসি এর জন্য দায়ী।”
জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশে দেরির কারণে বাংলার মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ভিন রাজ্যে পড়তে যাচ্ছেন। এই ঘটনা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশাসনের দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া শেষ হবে, তবে শীর্ষ মেধাবীদের অনুপস্থিতিতে বাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রাজ্য সরকারের উচিত এই সমস্যার সমাধানে তৎপর হওয়া, যাতে ভবিষ্যতে মেধা ধরে রাখা সম্ভব হয়।

