ক্লাস টেনের পর ITI কোর্স: গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড, ক্যারিয়ার সুযোগ ও উচ্চশিক্ষার পথ

Avhijan
0

ক্লাস টেনের পর ITI কোর্স: গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড, ক্যারিয়ার সুযোগ ও উচ্চশিক্ষার পথ

ক্লাস টেনের পর আইটিআই কোর্স: গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড, ক্যারিয়ার সুযোগ ও উচ্চশিক্ষার পথক্লাস টেনের পর আইটিআই কোর্সে ভর্তি, গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড, ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা এবং বিটেক বা এমটেকের মতো উচ্চশিক্ষার পথ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ITI কোর্স, ক্লাস টেনের পর কোর্স, গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড, ক্যারিয়ার সুযোগ, বিটেক, এমটেক, ভোকেশনাল ট্রেনিং, উচ্চশিক্ষা

আইটিআই কোর্স কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ITI) হল এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা, যা ক্লাস টেন পাশ করা শিক্ষার্থীদের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রদান করে। এই কোর্সগুলো শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তিগত ও ব্যবহারিক দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে। আইটিআই কোর্স শিক্ষার্থীদের দ্রুত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ দেয় এবং স্বনির্ভর হওয়ার পথ সুগম করে। এই প্রশিক্ষণ শুধু চাকরির জন্যই নয়, উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কীভাবে আইটিআই কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়?

ক্লাস টেনের পর আইটিআই কোর্সে ভর্তির জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

  1. যোগ্যতা: শিক্ষার্থীকে ক্লাস টেন পাশ করতে হবে। কিছু ট্রেডের জন্য গণিত ও বিজ্ঞানে ভালো ফলাফল প্রয়োজন।
  2. আবেদন প্রক্রিয়া: রাজ্য সরকারের শিক্ষা বিভাগের অধীনে থাকা আইটিআই প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে বা প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হয়।
  3. বয়সসীমা: সাধারণত ১৪ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হতে হয়।
  4. কোর্স ফি: সরকারি আইটিআই-তে ফি তুলনামূলক কম (১,০০০ থেকে ৯,০০০ টাকা), তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফি বেশি হতে পারে (১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা)।
  5. প্রয়োজনীয় নথি: মাধ্যমিকের মার্কশিট, সার্টিফিকেট, জন্ম সনদ, এবং আবাসিক প্রমাণপত্র।

কোর্সের মেয়াদ সাধারণত ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হয়, যা নির্দিষ্ট ট্রেডের উপর নির্ভর করে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইটিআই ট্রেড

আইটিআই কোর্স দুই ধরনের: প্রকৌশল (ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং অ-প্রকৌশল (নন-ইঞ্জিনিয়ারিং)। বর্তমান শিল্পের চাহিদা এবং কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার ভিত্তিতে নিচে কিছু জনপ্রিয় ট্রেডের তালিকা দেওয়া হল:

প্রকৌশল ট্রেড

  1. ইলেকট্রিশিয়ান: বৈদ্যুতিক সিস্টেমের ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের দক্ষতা শেখায়। এটি ২ বছরের কোর্স এবং শিল্প ও গৃহস্থালি ক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
  2. ফিটার: যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক অংশের সমাবেশ ও রক্ষণাবেক্ষণ শেখায়। এটি ২ বছরের কোর্স।
  3. ওয়েল্ডার: ধাতব অংশ জোড়া দেওয়ার কৌশল শেখানো হয়। এটি ১ বছরের কোর্স এবং নির্মাণ শিল্পে জনপ্রিয়।
  4. মেকানিক (ডিজেল): ডিজেল ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত শেখায়। এটি ১ বছরের কোর্স।
  5. কম্পিউটার অপারেটর অ্যান্ড প্রোগ্রামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (COPA): কম্পিউটার অপারেশন, সফটওয়্যার ও প্রোগ্রামিংয়ের দক্ষতা শেখায়। এটি ১ বছরের কোর্স এবং আইটি সেক্টরে চাহিদা রয়েছে।

অ-প্রকৌশল ট্রেড

  1. হেয়ার অ্যান্ড স্কিন কেয়ার: সৌন্দর্য ও ত্বকের যত্নের দক্ষতা শেখায়। এটি ১ বছরের কোর্স এবং সৌন্দর্য শিল্পে জনপ্রিয়।
  2. ড্রেসমেকিং: পোশাক তৈরি ও ডিজাইনের কৌশল শেখানো হয়। এটি ১ বছরের কোর্স।
  3. ফুড প্রোডাকশন (জেনারেল): খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও রান্নার দক্ষতা শেখায়। এটি ১ বছরের কোর্স এবং হসপিটালিটি সেক্টরে চাহিদা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের নিজের আগ্রহ, দক্ষতা এবং বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে ট্রেড নির্বাচন করা উচিত।

আইটিআই কোর্সের পর ক্যারিয়ারের ক্ষেত্র

আইটিআই কোর্স সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে পারে। নিচে কিছু সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র উল্লেখ করা হল:

  1. নির্মাণ শিল্প: ওয়েল্ডার, ফিটার, এবং প্লাম্বারদের জন্য নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ঠিকাদারি কাজ বা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।
  2. বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স: ইলেকট্রিশিয়ান এবং ইলেকট্রনিক্স মেকানিকরা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি, উৎপাদন শিল্প বা নিজস্ব ব্যবসায় কাজ করতে পারেন।
  3. অটোমোবাইল শিল্প: মেকানিক (ডিজেল) এবং অটোমোবাইল মেকানিকরা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে নিয়োজিত হতে পারেন।
  4. আইটি ও ডিজিটাল সেক্টর: COPA ট্রেডের শিক্ষার্থীরা ডাটা এন্ট্রি, সফটওয়্যার টেস্টিং, বা আইটি সাপোর্টে কাজ করতে পারেন।
  5. সৌন্দর্য ও ফ্যাশন শিল্প: হেয়ার অ্যান্ড স্কিন কেয়ার এবং ড্রেসমেকিং ট্রেডের শিক্ষার্থীরা সেলুন, ফ্যাশন হাউস, বা নিজস্ব ব্যবসায় যুক্ত হতে পারেন।
  6. হসপিটালিটি সেক্টর: ফুড প্রোডাকশন ট্রেডের শিক্ষার্থীরা হোটেল, রেস্তোরাঁ, বা ক্যাটারিং ব্যবসায় কাজ করতে পারেন।

এছাড়া, আইটিআই শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির জন্যও আবেদন করতে পারেন, যেমন রেলওয়ে, বিদ্যুৎ বিভাগ, বা পাবলিক সেক্টরে। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করাও একটি লাভজনক পথ।

আইটিআই থেকে বিটেক বা এমটেক: কীভাবে সম্ভব?

আইটিআই কোর্স সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি যেমন বিটেক (B.Tech) বা এমটেক (M.Tech) অর্জন করতে পারেন। এই পথে যাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

ধাপ ১: ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি

  • প্রক্রিয়া: আইটিআই কোর্স (বিশেষত প্রকৌশল ট্রেড যেমন ইলেকট্রিশিয়ান, ফিটার, বা মেকানিক) সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।
  • যোগ্যতা: আইটিআই সার্টিফিকেট এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রবেশিকা পরীক্ষা (যেমন পলিটেকনিক এন্ট্রান্স টেস্ট) দিতে হতে পারে।
  • কোর্সের মেয়াদ: ডিপ্লোমা কোর্স সাধারণত ৩ বছরের হয়।
  • বিষয় নির্বাচন: আইটিআই ট্রেডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় নির্বাচন করতে হবে, যেমন ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং।

ধাপ ২: বিটেক-এ ল্যাটারাল এন্ট্রি

  • প্রক্রিয়া: ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা বিটেক প্রোগ্রামে ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে দ্বিতীয় বছরে সরাসরি ভর্তি হতে পারেন।
  • প্রবেশিকা পরীক্ষা: অনেক রাজ্যে ল্যাটারাল এন্ট্রি প্রবেশিকা পরীক্ষা (যেমন LEET বা Lateral Entry Entrance Test) দিতে হয়। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেধার ভিত্তিতে ভর্তি নেয়।
  • কোর্সের মেয়াদ: ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে বিটেক সম্পন্ন করতে ৩ বছর সময় লাগে (মোট ৪ বছরের পরিবর্তে)।
  • বিষয় নির্বাচন: ডিপ্লোমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় নির্বাচন করতে হবে।

ধাপ ৩: এমটেক-এ ভর্তি

  • প্রক্রিয়া: বিটেক ডিগ্রি অর্জনের পর শিক্ষার্থীরা এমটেক (মাস্টার্স ইন টেকনোলজি) প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারেন।
  • প্রবেশিকা পরীক্ষা: এমটেক-এ ভর্তির জন্য GATE (Graduate Aptitude Test in Engineering) পরীক্ষায় ভালো স্কোর করতে হবে। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব প্রবেশিকা পরীক্ষা বা মেধার ভিত্তিতে ভর্তি নেয়।
  • কোর্সের মেয়াদ: এমটেক সাধারণত ২ বছরের কোর্স।
  • বিশেষায়িত ক্ষেত্র: শিক্ষার্থীরা নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী বিশেষায়িত ক্ষেত্র নির্বাচন করতে পারেন, যেমন পাওয়ার সিস্টেম, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বা মেশিন ডিজাইন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • সময় ও পরিশ্রম: আইটিআই থেকে বিটেক এবং এমটেক পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ৮-১০ বছর সময় লাগতে পারে (২ বছর আইটিআই + ৩ বছর ডিপ্লোমা + ৩ বছর বিটেক + ২ বছর এমটেক)।
  • আর্থিক পরিকল্পনা: সরকারি প্রতিষ্ঠানে ফি কম হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফি বেশি হতে পারে। স্কলারশিপ বা শিক্ষা ঋণের সুযোগ থাকতে পারে।
  • কাজের অভিজ্ঞতা: ডিপ্লোমা বা বিটেকের পর কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করলে এমটেক-এ ভর্তি এবং ক্যারিয়ার গঠনে সুবিধা হয়।

কেন আইটিআই কোর্স বেছে নেবেন?

আইটিআই কোর্স শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ব্যবহারিক এবং সাশ্রয়ী শিক্ষার পথ। এটি দ্রুত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ দেয় এবং উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গঠনের পথ প্রশস্ত করে। বর্তমানে শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে আইটিআই প্রশিক্ষিত এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ক্লাস টেনের পর আইটিআই কোর্স একটি সম্ভাবনাময় পথ, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। সঠিক ট্রেড নির্বাচন, পরিশ্রম এবং উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিল্পে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। আইটিআই থেকে বিটেক বা এমটেক পর্যন্ত যাত্রা দীর্ঘ হলেও, এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্থিতিশীল ও সম্মানজনক ক্যারিয়ারের পথ নিশ্চিত করে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উচিত নিকটস্থ আইটিআই প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং নিজের ভবিষ্যৎ গঠনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য: ক্লাস ১২-এর পর এয়ার ফোর্স ও নেভি

উচ্চ মাধ্যমিকের পর ক্যারিয়ার গড়ার সেরা অপশন | তোমার স্বপ্নের পথ খুঁজে নাও! 2025 গাইড

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)