উচ্চ মাধ্যমিকের পর MBBS পড়তে চান? জানুন এই বিষয়গুলো

Avhijan
0


MBBS: ভর্তি, খরচ ও শীর্ষ কলেজ । ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কে না দেখে? পশ্চিমবঙ্গে MBBS পড়া শুধু একটি সম্মানজনক ক্যারিয়ারের পথই নয়, বরং এটি একটি সাশ্রয়ী এবং উন্নত শিক্ষার সুযোগও। কিন্তু এই পথে পা বাড়ানোর আগে কী কী জানা দরকার? কীভাবে ভর্তি হবেন, খরচ কেমন, কোন কলেজ বেছে নেবেন—এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এসেছি আমরা। চলুন, বিস্তারিত জানা যাক!

  1. এমবিবিএস করতে কত বছর লাগে?
  2. এমবিবিএস কি দ্বাদশ শ্রেণির পর?
  3. এমবিবিএস কোর্সের মেয়াদ কত বছর?
  4. ১০ লক্ষ টাকায় এমবিবিএস করা যাবে কি?
আমরা এই প্রতিবেদনের সমস্ত বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি এই বিষয়টি পড়লে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে তোমার ধারণা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

MBBS কোর্স: কত বছরের পড়াশোনা?

এমবিবিএস একটি ৫.৫ বছরের স্নাতক কোর্স। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ৪.৫ বছরের একাডেমিক পড়াশোনা: শারীরবিদ্যা, জৈব রসায়ন, প্যাথলজি, মেডিসিন, সার্জারি—এমন নানা বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন।
  • ১ বছরের ইন্টার্নশিপ: হাসপাতালে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ, যেখানে রোগীদের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

এর আগে, ভর্তির জন্য NEET-UG পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, যার জন্য ১১ ও ১২ শ্রেণিতে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, এবং বায়োলজি নিয়ে ভালো ফলাফল করতে হবে। সব মিলিয়ে, এমবিবিএস শেষ করতে প্রায় ৭-৮ বছর লাগে।

আরো দেখুন

উচ্চমাধ্যমিকের পর এগ্রিকালচার: পড়াশোনার সুযোগ, চাকরির সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ

শিক্ষাগত যোগ্যতা: qualification

  • 10+2 (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে পাশ থাকতে হবে, যেখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, এবং জীববিজ্ঞান/জৈবপ্রযুক্তি বিষয় থাকতে হবে. 
  • 10+2 পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, এবং জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম 50% নম্বর পেতে হবে. সংরক্ষিত বিভাগের প্রার্থীদের জন্য এই নম্বর 40% হতে পারে. 

পশ্চিমবঙ্গে এমবিবিএস-এ ভর্তির প্রক্রিয়া

পশ্চিমবঙ্গে এমবিবিএস-এ ভর্তি হতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

  1. NEET-UG পরীক্ষা: জাতীয় পর্যায়ের এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, এবং বায়োলজি থেকে ১৮০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
  2. কাউন্সেলিং: NEET স্কোরের ভিত্তিতে West Bengal Medical Counselling Committee (WBMCC) বা Medical Counselling Committee (MCC)-এর মাধ্যমে কাউন্সেলিং হয়। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ফরম ফিলাপ হয়।
  3. ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন: মার্কশিট, NEET স্কোরকার্ড, ডোমিসাইল সার্টিফিকেট ইত্যাদি জমা দিতে হয়।
  4. সিট অ্যালটমেন্ট: আপনার স্কোর এবং পছন্দের ভিত্তিতে কলেজ বরাদ্দ হবে।

যোগ্যতা: ১২শ শ্রেণিতে ন্যূনতম ৫০% নম্বর (জেনারেল), ৪০% (SC/ST/OBC), এবং ১৭ বছর বয়স।

পশ্চিমবঙ্গে এমবিবিএস-এর খরচ

খরচ নির্ভর করে কলেজের ধরনের ওপর। চলুন দেখে নিই:

সরকারি মেডিকেল কলেজ

  • টিউশন ফি: বছরে প্রায় ১২,০০০ টাকা। মোট ৫.৫ বছরে ৫৪,০০০ টাকা।
  • হস্টেল ও অন্যান্য ফি: বছরে ১৪৪-১,০০০ টাকা। মোট ১-১.৫ লক্ষ টাকা।
  • ইন্টার্নশিপ: মাসে ২৮,০৫০ টাকা স্টাইপেন্ড।
সরকার সরকারিভাবে সুযোগ পেলে খরচ খুবই কম।

প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ

  • টিউশন ফি: স্টেট কোটায় বছরে ২০-২৫ লক্ষ, ম্যানেজমেন্ট কোটায় ৩০-৪০ লক্ষ টাকা।
  • মোট খরচ: ১-২ কোটি টাকা (৫.৫ বছরে)।

টিপস: সরকারি কলেজে ভর্তি হলে খরচ অনেক কম। প্রাইভেট কলেজে ভর্তির আগে ফি স্ট্রাকচার যাচাই করুন।

পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ মেডিকেল কলেজ

পশ্চিমবঙ্গে ৩৫টি মেডিকেল কলেজে প্রায় ১০,১৫৩টি এমবিবিএস আসন রয়েছে। এখানে কয়েকটি শীর্ষ কলেজের তালিকা:

সরকারি কলেজ

  • Medical College, Kolkata: প্রাচীনতম ও সেরা। NEET কাট-অফ ৬০০+। ফি: ~১২,০০০/বছর।
  • AIIMS Kalyani: আধুনিক সুযোগ। NEET কাট-অফ ৬৫০+। ফি: ~৫,৮৫৬/বছর।
  • IPGMER, Kolkata: গবেষণা ও শিক্ষার জন্য বিখ্যাত। NEET কাট-অফ ৫৮০+।

প্রাইভেট কলেজ

  • KPC Medical College, Jadavpur: ভালো ফ্যাকাল্টি। NEET কাট-অফ ৪৫০+।
  • IQ City Medical College, Durgapur: আধুনিক ক্যাম্পাস। NEET কাট-অফ ৪০০+।

পরামর্শ: NEET-এ ৫৫০+ স্কোর থাকলে সরকারি কলেজে চেষ্টা করুন। কলকাতার কলেজগুলো ক্লিনিকাল এক্সপোজারের জন্য সেরা।

কেন পশ্চিমবঙ্গে এমবিবিএস পড়বেন?

  • সাশ্রয়ী ফি: সরকারি কলেজে খরচ অনেক কম।
  • উন্নত শিক্ষা: NMC ও WHO স্বীকৃত কলেজ।
  • ক্লিনিকাল এক্সপোজার: বৈচিত্র্যময় রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ।
  • ক্যারিয়ার: চাকরি, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন, বা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সম্ভাবনা।

কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

NEET-UG-এ সফলতার জন্য:

  • নিয়মিত পড়াশোনা এবং মক টেস্ট দিন।
  • বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করুন।
  • কোচিং বা সেলফ-স্টাডির মাধ্যমে ফোকাস রাখুন।

কাউন্সেলিং-এর সময় সঠিক কলেজ পছন্দ করুন এবং ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখুন।

পশ্চিমবঙ্গে এমবিবিএস পড়া একটি স্বপ্ন পূরণের পথ। সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম, এবং সঠিক তথ্যের সঙ্গে এই পথ অনেক সহজ হয়ে যায়। আপনার যাত্রা শুরু করার জন্য এই গাইড কাজে লাগুক। কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন!

আপনার এমবিবিএস যাত্রার গল্প শেয়ার করুন কমেন্টে!

আরো দেখুন

উচ্চমাধ্যমিকের পর ফার্মাসি? কী কী সুযোগ রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ কেমন হবে?

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)